ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা
প্রাণায়াম হল সুস্থ ও শান্ত জীবনের রহস্য। আমাদের জীবন, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবিধির উপর নির্ভরশীল এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন, রোগ, দুঃখ ও স্বাস্থহীন শরীরের কারণ। দূষণে ভরা পরিবেশ ও দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে, যার কারণে সঙ্কটের সময়ে জীবনীশক্তি আমাদের সাহায্য করতে পারে না। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে অবশ্যই প্রতিদিন প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত। আমরা আগের কিছু প্রতিবেদনে জেনেছি প্রাণায়াম কি, কত প্রকার, ও তার উপকারিতা। এছাড়াও জেনেছি কপালভাতি ও অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম করার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি এবং ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ কলকাতার দর্শনীয় স্থান
প্রাণায়াম কি
অষ্টাঙ্গযোগের চতুর্থ অঙ্গ হল প্রাণায়াম। প্রাণায়াম সম্মন্ধে বলতে গিয়ে ঋষি পতঞ্জলি বলেছেন "তস্মিন সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ", অর্থাৎ শ্বাস ও প্রশ্বাসের গতিকে যখন বিচ্ছেদ করে দেওয়া হয়, তখন তাকে প্রাণায়াম বলে। এখানে বিচ্ছেদ মানে নিয়ন্ত্রণ করা।
আরও পড়ুনঃ অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা
প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি
প্রাণায়াম মোট ১১ প্রকার, যথা ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম, কপালভাতি প্রাণায়াম, বাহ্য প্রাণায়াম, অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম, ভ্রামরী প্রাণায়াম, নাড়ি শোধন প্রাণায়াম, চন্দ্রভেদী প্রাণায়াম, উজ্জায়ী প্রাণায়াম, শীতলী প্রাণায়াম, সীৎকারী প্রাণায়াম, মূর্ছা প্রাণায়াম।
আরও পড়ুনঃ কপালভাতি প্রাণায়াম করার নিয়ম ও উপকারিতা
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম
কোন ধনাত্মক আসনে সুবিধা অনুযায়ী বসে দুই নাক দিয়ে শ্বাসকে পুরো ভিতরে ডায়াফ্রাম পর্যন্ত ভরা এবং বাইরেও পুরো শক্তির সঙ্গে শ্বাস ছাড়াকে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম বলে। এই প্রাণায়ামকে নিজের নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তিন প্রকারের করা যেতে পারে, যথা মৃদু গতিতে, মধ্যম গতিতে, এবং তীব্র গতিতে। যেসব ব্যক্তির ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ড দুর্বল, তাদের মৃদু গতিতে রেচক এবং পূরক করে এই প্রাণায়াম করা উচিত। সুস্থ ব্যক্তি এবং পুরনো অভ্যাসকারীদের ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়িয়ে মধ্যম এবং তারপর তীব্র গতিতে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করা উচিত। এই প্রাণায়াম 3-5 মিনিট পর্যন্ত করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ মেডিটেশন করার সঠিক সময়
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
- যেকোনো শান্ত পরিবেশ বেঁচে নিন, সিদ্ধাসন, যেকোনো আরামদায়ক, যেমন বজ্রাসন বা পদ্মাসনের মতো ভঙ্গিতে বসুন।
- চোখ বন্ধ করে বসে কিছুক্ষণ শরীর শিথিল করুন।
- আপনার মুখ বন্ধ রাখুন, আপনার হাত জ্ঞান মুদ্রায় রাখুন।
- ১০ বার উভয় নাসারন্ধ্র দিয়ে দ্রুত শ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন।
- উভয় নাসারন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নিন।
- উভয় নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন এবং কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন।
- উভয় নাকের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
আরও পড়ুনঃ প্রাণায়াম কাকে বলে, প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি
ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের উপকারিতা
- পেটের মেদ কমাতে: ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এমনই একটি প্রাণায়াম যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে, তবে এর ধারাবাহিকভাবে অনুশীলন করা দরকার।
- গলা ফুলে যাওয়া: এই প্রাণায়ামের অভ্যাস গলা ব্যথায় দারুণ উপশম দেয়।
- ক্ষুধা বাড়ায়: ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের অভ্যাস ক্ষুধা বাড়ায়।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়: শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার জন্য এটি সেরা প্রাণায়াম।
- ওজন কমানোর জন্য: ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম এমন একটি প্রাণায়াম যা আপনার ওজন কমাতে কার্যকরী। পেটের চর্বি এবং ওজন কমাতে, এটি তখনই কার্যকর হয় যখন এটি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য অনুশীলন করা হয়।
- হাঁপানির জন্য: হাঁপানি রোগীদের জন্য ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম একটি খুব ভালো যোগব্যায়ামের অনুশীলন। কথিত আছে যে এই প্রাণায়ামের নিয়মিত অনুশীলনে শুধু হাঁপানি কমবে না, এটি চিরতরে নির্মূল হবে।
- সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি, শ্বাসরোগ, হাঁপানি, শ্লেষ্মা, সাইনাস ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের কফ ঘটিত রোগ দূর হয়। ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং শুদ্ধ বায়ু প্রাপ্তির ফলে হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কেরও আরোগ্য লাভ হয়।
- থাইরয়েড, টনসিল ইত্যাদি গলার সমস্ত রোগ দূর হয়।
- রক্ত পরিশুদ্ধ হয় এবং শরীরের বিষাক্ত, বিজাতীয় দ্রব্য শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।
- প্রাণ ও মণ স্থির হয়।
- এই প্রাণায়াম অতিরিক্ত বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মা থেকে সৃষ্ট রোগ দূর করে এবং শরীরে তাপ সরবরাহ করে।
- এই প্রাণায়াম নাড়ি প্রবাহকে শুদ্ধ করে। সমস্ত কুম্ভকের মধ্যে ভাস্ত্রিকা কুম্ভক সবচেয়ে উপকারী।
সতর্কতা
- যেসব ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে, তাদের তীব্র গতিতে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করা উচিত নয়।
- এই প্রাণায়াম করার সময় যখন শ্বাস ভিতরে প্রবেশ করবে, তখন পেটকে ফোলানো উচিত নয়। শ্বাস ডায়াফ্রাম পর্যন্ত ভরতে হবে, এতে পেট ফুলবে না, পাঁজর পর্যন্ত শুধু বুকই ফুলবে।
- গ্রীষ্ম ঋতুতে এই প্রাণায়াম অল্প মাত্রায় করা উচিত।
- কফের আধিক্য বা সাইনাস রোগের কারণে যেসব ব্যক্তির দুই নাসাছিদ্র ঠিক মতন খোলা থাকেনা, সেইসব ব্যক্তিদের প্রথমে ডান নাসাছিদ্র (পিঙ্গলা) বন্ধ করে বাম নাসাছিদ্র দিয়ে রেচক ও পূরক করা উচিত। তারপর বাম নাসাছিদ্র (ঈড়া) বন্ধ করে ডান নাসাছিদ্র দিয়ে মৃদু, মধ্যম বা তীব্র গতিতে রেচক এবং পূরক করে ভস্ত্রিকা প্রণায়াম করতে হবে।
- এই প্রাণায়াম প্রতিদিন 3-5 মিনিট পর্যন্ত অভ্যাস করতে হবে।
- প্রাণায়াম করার সময় চোখ দুটিকে বন্ধ করে এবং প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করা উচিত।
প্রাণায়াম শরীরের জন্যে খুবই উপকারী, এটি আমাদের শরীরকে সবদিক থেকে রক্ষা করে। তাই, আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানলাম ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি এবং ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা সম্পর্কে। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য ও আলোচনা যদি আপনাদের উপকারী বলে মনে হয় তাহলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন এবং প্রতিদিন এরকম বিভিন্ন বিষয়ের পোস্ট পেতে আমাদের "টেলিগ্রাম চ্যানেল" জয়েন করুন।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে একজন IAS অফিসার হবেন
0 Comments